বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি কৃষি। কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মনির্ভরশীল ও সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিআরডিবি'র অবদান উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BIDS) কর্তৃক সম্পাদিত এক সমীক্ষায় দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) তে বিআরডিবি’র অবদান ১.৯৩% বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিআরডিবি একটি বৃহৎ সরকারী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ধরণের কৃষিজ ফসল যেমন- ডাল, তৈলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল অপ্রধান শস্য হিসাবে পরিগণিত। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশ কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রধান খাদ্য শস্য (ধান) উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও অপ্রধান খাদ্য শস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে এ সকল ফসল আমাদের আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, মৌসুমি আবহাওয়া এবং নাতিশীতোষ্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে প্রচুর পরিমাণে ঋতুভিত্তিক অপ্রধান শস্য যেমন বিভিন্ন প্রকার ডাল জাতীয় (মুগ, মসুর, ছোলা, মটর, খেসারী, মাসকলাই ইত্যাদি), তৈলবীজ জাতীয় (সরিষা, তিল, তিসি, কালিজিরা, সূর্যমূখী, সয়াবিন ও চিনাবাদাম ইত্যাদি), মসলা জাতীয় (আদা, হলুদ, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি) এবং ভু্ট্টা উৎপাদনের সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান, তথ্য, পুঁজি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের অভাবে অপ্রধান শস্য উৎপাদন অনেকটা অলাভজনক মর্মে কৃষককূল মনে করেন। ফলে চাষিরা বিশেষত: ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের এ সুযোগ বিদ্যামান থাকা সত্ত্বেও অপ্রধান শস্য উৎপাদনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অথচ এসব নিত্য প্রয়োজনীয় শস্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। এর ফলে বাজার দর উঠানামা করে এবং মূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে এ সকল অপ্রধান শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে অস্বাভাবিক বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং একই সাথে বৈদেশিক আমদানি ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো মজবুত রাখতে অবদান রাখবে। এ সকল শস্য উৎপাদনে উৎসাহ, পুঁজির যোগান এবং প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়ক সহযোগিতা প্রদান করা হলে অপ্রধান শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। ফলে একদিকে আমদানি নির্ভরতা সংকোচনসহ খাদ্য নিরাপত্তার বাড়তি বলয় সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে কৃষির মানোন্নয়নসহ খাদ্যাভাস পরিবর্তনের বহুবিধ ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। অপ্রধান শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, চাষযোগ্য পতিত জমির অধিক ব্যবহার (বসত ভিটায়), সঠিক সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে বর্তমানে বিআরডিবি’র আওতায় ০১ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ হতে “অপ্রধান শস্য কর্মসূচি” নামে কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। কর্মসূচির উদ্দেশ্যঃ কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো কর্মসূচি এলাকায় ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় অপ্রধান শস্য উৎপাদনের প্রসার ঘটানো ও পল্লীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অপ্রধান শস্যের আমদানি নির্ভরতা হ্রাসকরণ।